দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ(ডিসেম্বর ১১, ২০১৮) :
একাদশ জাতীয় নির্বাচন আসছে। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় সম্ভাব্য নতুন অর্থমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করেন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : একটি দেশের অর্থনীতি যখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায় তখন কিছু চ্যালেঞ্জ থেকে যায় বা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। কিছু চ্যালেঞ্জ সবসময়ই একটি অর্থনীতিতে থাকে। তারপরও অর্থনীতি এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, তাই বলে এর যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে না তা নয়। আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে বা হচ্ছে। বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যায়। অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে তার সবই রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। তারপরও অর্থনীতি এগিয়ে যাবে, এটাই রীতি। কিন্তু আমাদের সব সময়ই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামীতে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিদ্যমান সমস্যাগুলো ছাড়াও আরও কিছু নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আগামীতে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা যতটা এগিয়ে গেছি তাকে সুসংহত করতে হবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হবে। একই সঙ্গে উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে। এসডিজির একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। আগামীতে এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গেলেই দক্ষতা উন্নয়নের প্রশ্নটি এসে যাবে। দক্ষতা উন্নয়ন ব্যতীত সবাইকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে না। কাজেই আমাদের এখনই দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সব খাতেই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। যেটা একমাত্র সম্ভব দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই। গ্রামীণ খাতে তদারকির খুব অভাব লক্ষ্য করা যায়। তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করা না গেলে ছোট ছোট উদ্যোগগুলো কাক্সিক্ষত মাত্রায় ফল দিতে পারবে না। আগামীতে এ ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক শ্রেণির উদ্যোক্তা গড়ে উঠছে ঠিকই; কিন্তু তাদের জন্য কর্তৃপক্ষীয় সহায়তা আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কীভাবে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বাজারজাত করতে হবেÑ এ ব্যাপারে তাদের সহায়তা দিতে হবে। অনেকেই ভালো ভালো পণ্য উৎপাদন করলেও সঠিক বাজারজাতকরণের অভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে।
আগামীতে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তা হলোÑ উন্নয়ন প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ হয় তা সঠিকভাবে নির্ধারিত সময়ে ব্যয় করতে পারা। আমাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ হয় তার পুরোটা ব্যয় করা প্রায়ই সম্ভব হয় না। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে হয় না। আবার যে অর্থ ব্যয় হয় তাও সঠিকভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয়িত হয় না। দুর্নীতি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু অর্থ চলে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে যে ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয় তা বাস্তবায়নের হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। আগামীতে নতুন সরকারের জন্য এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠাটা বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে দেখা যায়, আমরা যত দূর যেতে পারতাম তা যেতে পারছি না। সময়মতো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে প্রকল্প ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যায়। বিশেষ করে বৃহৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এ সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। আগামীতে এসব বিষয়ে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততর করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যাতে দুর্নীতি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি; কিন্তু দুর্নীতি তো কমে না। এদিকে নজর না দিলে উন্নয়নের সুফল সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারবে না।
আপনি দুর্নীতির কথা বললেন। আপনি বলবেন কী দেশের করপোরেট গুড গভর্ন্যান্সের অবস্থা কেমন, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরের?
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের প্রচ- অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরের মতো আর্থিক খাতে এমন সব কাজ-কারবার চলছে যা কোনোভাবেই উচিত নয়। যেমন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করা। ঋণ নিয়ে যথা সময়ে ফেরত না দেওয়া বা ঋণের অর্থ একেবারেই ফেরত না দেওয়া ইত্যাদি। এগুলো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ব্যাংক পরিচালনায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হয়ে যাচ্ছেন। যে ধরনের করপোরেট কালচার থাকা প্রয়োজন তা গড়ে ওঠছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের যেভাবে তদারকি করার কথা তারা সেটা সঠিকভাবে করতে পারছে বলে মনে হয় না। ব্যাংকিং খাতে করপোরেট গভর্ন্যান্স খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগামী সরকার, বিশেষভাবে সুনির্দিষ্টভাবে বললে বলতে হয় নতুন অর্থমন্ত্রীর জন্য এটা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
ঋণ মান নির্ধারণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি অত্যন্ত ভালো হলেও ব্যাংকিং সেক্টর ভালো করতে পারছে না। দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার কারণে ঋণ ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই?
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে মুডিস নেতিবাচক মন্তব্য কললেও তারা বাংলাদেশের ঋণ মান কিন্তু ঠিকই রেখেছে। তারা বাংলাদেশের ঋণ মান ঠিক রাখলেও এখানে এক ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছেÑ এখানে তোমাদের উন্নতি করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য ভালো। তাদের মন্তব্যের কারণে আমরা সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাব। আমরা অনেক দিন ধরেই এ ব্যাপারে কথা বলে আসছিলাম। এখন মুডিস একই কথা বললো। যারা ব্যবস্থাপনায় আছেন তারা আমি আশা করব এখন সতর্ক হবেন। তারা আগামীতে এ খাতকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসবেন। ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে বলে মুডিস যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে এটা তো আমরাও অনেক দিন ধরেই বলে আসছিলাম। আমাদের মতো একটি অর্থনীতিতে এত সংখ্যক ব্যাংকের আবশ্যকতা নেই। এর আগে যে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তখনও আমি বলেছিলামÑ দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আরও কয়েকটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হলো। ব্যাংকগুলো আমানত নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। ব্যাংকগুলো এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ব্যাংকের সংখ্যা না বাড়িয়ে যদি শাখা বাড়ানো হতোÑ সেটাই হতো যৌক্তিক। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়ে গেছে। এদের জন্য ব্যাংক প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়াতে হবে তা ঠিক নয়, বরং বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর শাখা বৃদ্ধি করে এ প্রয়োজন মেটানো যেত। অনেক ব্যাংক আছে গ্রামে যাদের কোনো শাখা নেই। এদের গ্রামে শাখা খোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। ব্যাংকিং সেক্টরে যেসব নীতি প্রণীত হয় তার সঠিক বাস্তবায়ন আগামীতে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের পল্লি এলাকার সাধারণ কৃষকের উন্নয়ন বিশেষ করে তাদের কৃষির বাইরে ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য কৃষি ও পল্লি ঋণ নামে এক ধরনের বিশেষ ঋণদান কার্যক্রম চালু করেছে। গত অর্থবছরে এ খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এই উদ্যোগ পল্লি এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগ গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হচ্ছে বলে মনে করেন?
ষষ বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ও পল্লি ঋণ নামে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের জন্য যে বিশেষ ঋণদান কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত ভালো এবং কার্যকর একটি উদ্যোগ বলেই আমি মনে করি। যদিও উদ্যোগটি খুব একটা বড় নয়। কিন্তু তারপরও এর তাৎপর্য কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদের হার প্রচলিত ব্যাংক ঋণের সুদের হারের চেয়ে কম। কৃষক এবং সাধারণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নানাভাবে অবদান রাখতে সক্ষম তাদের জন্য এ ঋণদান কার্যক্রম বিশেষ সহায়ক হচ্ছে। আমি মনে করি, এ ঋণদান কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। কারণ গ্রামীণ অর্থনীতিতে সবসময়ই পুঁজিস্বল্পতা থাকে। পুঁজির অভাবে অনেকেই ইচ্ছে এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো বিশেষ উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারেন না। গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তারা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পেলে অসাধ্য সাধন করতে পারে। আমরা ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের কথা বলছি। কারণ প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ব্যতীত কোনো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হতে পারে না। আর উন্নয়ন হলেও তা টেকসই হয় না। তাই আমাদের যে কোনো মূল্যেই হোক কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আর এটা আজ সর্বজন স্বীকৃতÑ শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদানের মাধ্যমে কোনো দিনই বেকার সমস্যা নিরসন করা যাবে না। এ জন্য স্ব-উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে। একজন উদ্যোক্তা নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি যাতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়ন করছি। এসডিজির একটি বড় শর্ত হচ্ছেÑ কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। কাজেই সমাজে বেকার সমস্যা বিদ্যমান রেখে কখনোই সত্যিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের আরও গুরুত্বের সঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় স্ব-উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যেখানে উদ্যোক্তা নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণের পাশাপাশি অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। এরই মধ্যে এ ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একে আরও বেগবান করার জন্য রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে হবে। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন থেকে আমরা পল্লি এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সফলতাও উল্লেখ করার মতো। গ্রাম এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। অল্প পুঁজিতেই এ ধরনের ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সিডিউল ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পল্লি এলাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। এ উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রামকে পেছনে ফেলে রেখে কখনোই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে না। প্রত্যেকটি গ্রামকে একেকটি উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। যাতে গ্রামের মানুষকে কর্মসংস্থানের জন্য শহরে আসতে না হয়। তারা গ্রামেই কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোগ সৃষ্টির জন্য শুধু অর্থ বা পুঁজি প্রদান করলেই চলবে না, সে অর্থ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। কারণ তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে প্রদত্ত অর্থ বা পুঁজি অন্য খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এছাড়া উৎপাদক শ্রেণি যে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করছে তা কতটা মানসম্পন্ন হচ্ছে সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। অন্যথায় এ উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে কি?
নির্বাচনের আগে আনেক সময় মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। আবার অনেক সময় মূল্যস্ফীতি না বেড়ে বরং স্বাভাবিক থাকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নাও বাড়তে পারে। কারণ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মতো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন উপলক্ষে বাজারে কিছু বাড়তি টাকা চলে আসতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না। কারণ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বেশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
নির্বাচনের প্রাক্কালে অথবা পরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা আছে কি?
নির্বাচনের সময় প্রতি বছরই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি ঘটে। কারণ এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নির্বাচন নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত থাকেন। ফলে এ সুযোগে সমাজবিরোধীরা তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। তবে এবার দেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দল যেহেতু অংশগ্রহণ করছে, ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব একটা অবনতি ঘটার আশঙ্কা নেই বলেই আমি মনে করি। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই তা ২০১৫ সালের মতো হবে না।
অনেক দিন ধরেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুব একটা চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে নতুন মাত্রায় গতিশীলতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন কি?
যদি নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশের ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আমি মনে করি। যদিও আমাদের দেশের একটি কালচার হচ্ছে নির্বাচনে যে দল হেরে যায় তারা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তা এমনিতেই বোঝা যায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এবার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে আমি ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করাই আছে। আগামীতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বর্ধিতমাত্রায় আসবে বলে আমি মনে করি। কিন্তু আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছেÑ অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদির সমস্যা। এগুলো সমাধানের জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। কয়েক বছর দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল না কিন্তু এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। আগামী নির্বাচনের পর সে অবস্থা কেটে যাবে বলে আমি মনে করি।
আলোকিত বাংলাদেশ : আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
সোর্সঃ “সাক্ষাৎকারে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদঃ যে কোনো মূল্যেই হোক কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে” আলোকিত বাংলাদেশ। মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮।
Source Link: https://www.alokitobangladesh.com/todays/details/280657/2018/12/11